কবিতা- এক আশ্চর্য মানুষের কবিতা

এক আশ্চর্য মানুষের কবিতা
সুনির্মল বসু

প্রতিরাতে জানালায় চাঁদ দেখা দিলে
লোকটা নীহারিকা লোক, সপ্তর্ষিমণ্ডল ছাড়িয়ে অনন্ত আকাশে অলৌকিক ভাবনায় বিচরণ করে,
বিকেলে নদীর পাশে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর কেবলই মনে হয়, নদীও তাঁর সঙ্গে অনন্ত যাত্রা পথে নিরক্ষরেখার দিকে হেঁটে চলেছে,
রাত গভীরে যখন চাঁদ আকাশের এক প্রান্তে হেলে পড়ে,
লোকটার সঙ্গে চাঁদের অনেক অনেক কথা হয়,
দিনের বেলায় সেই গোপন কথাগুলো সে কিছুতেই মনে করতে পারে না,
সকালবেলায় বিলের জলে শাপলা শালুক ফুটে থাকে, প্রজাপতি গঙ্গাফড়িং উড়ে যায়,
লোকটা চেয়ে দ্যাখে, চেয়ে দ্যাখে,
আর মুগ্ধতায় মরে যায়,
আকাশে জ্যোৎস্নার বৃষ্টি দেখতে দেখতে কতদিন তাঁর মনে হয়েছে, এই সব আয়োজন,
শুধু তাঁর একার জন্য,
লোকটা একদিন পথের মোড়ে আগাছার মতো হঠাৎ বেড়ে ওঠা শিমূলগাছটাকে ভালোবেসে ফেলল, আকাশ জুড়ে গাছটা একদিন ডালপালা বিস্তার করল,
গাছটা একদিন লালে লাল,
মৌটুসী পাখি এসে গাছের ডালে বসলো,
এক কাঠঠোকরা দম্পতি গাছটির কোটরে বাসা বাঁধলো,
একদিন আকাশে শিমূল তুলো উড়ে বেড়ালো,
গাছটা ততদিনে লোকটার পরম বন্ধু,
প্রতিদিন মনের কথা তাঁকে শোনানো চাই,
রাত গভীরে লোকটা তারাদের ভিড়ে
প্রতিদিন হারিয়ে যাওয়া মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে,
লোকটা এভাবে অন্যরকম বেঁচে থাকাটা শিখে নিয়েছে,
মনে মনে বলে, এই সব আয়োজন, শুধু একলা আমার জন্য,
ভাগ্যিস তোমরা ছিলে, আমার কখনো একলাটি মনে হয়নি।

Loading

2 thoughts on “কবিতা- এক আশ্চর্য মানুষের কবিতা

  1. এক আশ্চর্য ভালোলাগায় মন ভরে উঠলো।মনে হ’ল সেই আশ্চর্য লোকটাই কি আমি?এ কবিতা যেন আমারই জন্য!বড় একাত্ম হ’লাম। শুভ কামনা রইল কবি।

  2. উপরোক্ত মন্তব্যে আরো একটি সংযোজনার প্রয়োজন বোধ ক’রলাম।যে লেখা এমনভাবে পাঠকের মনে দোলা দেয় তিনি যেন অন্তর্যামী! আমার সশ্রদ্ধ ভালোবাসা কবির জন্য।

Leave A Comment